ইনিংস লজ্জার হার
স্পোর্টস রিপোর্টার
বোদ্ধারা বলে থাকেন- বল মারা নয়, ছাড়াটাই টেস্ট খেলা। তবে টাইগাররা এবার বল ছাড়া নিয়ে সমস্যায়। অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতা নিয়ে সমালোচনা শুনছিলেন টাইগাররা। আর ব্লুমফন্টেইনে লাইন না বুঝে বল ছেড়ে দিয়ে উইকেট খোয়ালেন লিটন-মুশফিকরা। এতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে গুঁড়িয়ে যায় মুশফিকবাহিনী। আর বাংলাদেশ দেখে ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল হার। টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৭৩/৪ রানে ইনিংস ঘোষণার জবাবে আগের দিন ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে এক অসম্ভব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন লিটন দাস। বাংলাদেশের এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০০ করতে পারি।’ আসলে রান যা-ই হোক টাইগাররা ব্যাট হাতে অন্তত ক্রিজ আঁকড়ে থাকবে- এমন প্রত্যাশা ছিল ভক্তদের। কিন্তু আশার গুড়ে বালি। প্রথম ইনিংসে টাইগার ব্যাটসম্যানরা কিজে কাটান ৪২.৫ ওভার। আর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল ৪২.৪।
ব্লুমফন্টেইনের ম্যাঙ্গায়ুং ওভাল মাঠে আগের দিনের ৭/০ সংগ্রহ নিয়ে গতকাল অল্পতেই উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। লড়াইটা যেখানে উইকেটে পড়ে থাকার, সেখানে ব্যক্তিগত ৩ রানে প্রোটিয়া ইনফর্ম পেসার কাগিসো রাবাদার অফস্টাম্পের বাইরের বল অযথাই খোঁচা মেরে ক্যাচ দেন সৌম্য। লাঞ্চের আগেই শীর্ষ চার ব্যাটসম্যান উইকেট খুইয়ে চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। একে একে উইকেট খোয়ান সৌম্য, ইমরুল, মুমিনুল ও মুশফিক। এতে ৯২/৪ সংগ্রহ নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
মুমিনুল আউট হন ফাঁদে আটকে। অতিরিক্ত শট খেলার খেসারত দেন মুমিনুল। নবম ওভারের তৃতীয় বলে রাবাদার বাউন্সার হেলমেটে আঘাত হানায় হয়তো কিছুটা তটস্থ ছিলেন বাংলাদেশের এ ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান। এক বল পরই আরেকটি বাউন্সার পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন মুমিনুল (১১)। ব্যাট হাতে ৩২ রান নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছিলেন অপর ওপেনার ইমরুল কায়েস। তবে উইকেট বিলিয় দেন ইমরুলও। লেগ স্টাম্প বরাবর ডুয়ান অলিভিয়েরের শর্ট বলটা ছেড়ে দিলেও পারতেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে সময়ের হেরেফেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইমরুল। বাংলাদেশের অন্যতম সুগঠিত ব্যাটসম্যান মুশফিক লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন কোনো মট না খেলেই। দলীয় স্কোরটা আরেকটু সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে রিয়াদের ব্যাট থেকে। আর ৫৯ বরে ইনিংসে ৭ বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে প্রোটিয়াদের জবাবও দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ফের পুরনো রোগ। অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপে ডিন এলগারের হাতে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ। আর বলের লাইন-লেংথ বুঝতে না পারার খেসারত দেন লিটন কুমার দাস। প্রোটিয়া পেসার আনদিলে ফেলুকোয়াওয়ের ডেলিভারি ছেড়ে দিয়ে নিজের স্টাম্প উপড়ে যেতে দেখেন লিটন। প্রথম টেস্টে ঠিক এভাবে বলের লাইন-লেংথ বুঝতে না পেরে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন লিটন। প্রথম ইনিংসে ডাক মারেন সাব্বির রহমান। আর গতকাল উইকেট খেয়ান ব্যক্তিগত ৪ রানে। ম্যাচ উভয় ইনিংসে পাঁচ উইকেটের কৃতিত্ব নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে কাগিসো রাবাদার হাতে। সিরিজে রাবাদার শিকার ১৫ উইকেট। এতে তিনি পূর্ণ করেন টেস্টে ক্যারিয়ারে ১০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্কও। আর দুই ম্যাচে সর্বাধিক ৩৩০ রান নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পান ডিন এলগার। সিরিজে দুই সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যাটসম্যান হাশিম আমলার সংগ্রহ ২৯৭ রান।
দুই ম্যাচের সিরিজে ২০০-উধর্ব রানের কৃতিত্ব দক্ষিণ আফ্রিকার চারজন ব্যাটসম্যানের। এলগার, মার্করাম, আমলা ও ডু প্লেসি। সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে ১০০ রানের কোঠা পার করেন মাত্রই দুইজন ব্যাটসম্যান । মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১২২ ও লিটন দাসের সংগ্রহ ১১৭ রান।
Leave a Comment