Breaking News

প্রচ্ছদ > অর্থনীতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না বাণিজ্যিক ব্যাংক

অনলাইন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না বাণিজ্যিক ব্যাংক

ঋণের সুদহার কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যয় কমাতে না পারায় তা রাখতে পারছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যার কারণে বিনিয়োগ স্থবিরতায়ও সুদহার কমছে না। ফলে ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধানের (স্প্রেড) বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা মানতে পারছে না দেশি বিদেশি ২২ বাণিজ্যিক ব্যাংক।

ব্যবসায়ীদের দাবি সুদহার না কমায় দেশে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। উচ্চ হারে সুদের কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। তবে ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সুদহার কমাতে পারছে না বলে জানিয়েছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাস শেষে দেশি-বিদেশি মিলে ২২ ব্যাংক এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের ব্যবধান নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামাতে পারেনি। এখনো কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ আমানতের সুদের ব্যবধান ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। তবে সুদহারের ব্যবধান কমাতে স্প্রেড ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগমুখি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবারই ঋণ আমানতের সুদ ব্যবধান (স্প্রেড) ৪ শতাংশের কাছাকাছি রাখতে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো ২২ ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

দেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের (৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ)। ব্র্যাক ব্যাংকের এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার প্রায় দ্বিগুণ। ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিচ্ছে গড়ে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে এবং ঋণ দিচ্ছে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক (৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ)। তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইউনিয়ন ব্যাংকের ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ওয়ান ব্যাংকের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এনআরবি ব্যাংক রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে। ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশে।

এছাড়া এবি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ, দ্য সিটি ব্যাংকে ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ, পূবালীর ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ায় ৫ দশমিক ০১ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং মধুমতি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের ব্যবধান রয়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এন.এ. ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, ওরি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, এইচএসবিসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড রয়েছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের জুনে আমানতের সুদের গড় হার কমে প্রায় ১ শতাংশ। কিন্তু ঋণের সুদের হার কমে মাত্র দশমিক ৫০ শতাংশ। আমানতের সুদের হারের তুলনায় ঋণের সুদের হার না কমায় স্প্রেড আবারো বেড়ে যায়। ওই সময়ে আমানতের গড় সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ঋণের গড় সুদের হার ছিল ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ফলে স্প্রেড আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়ায়। 

২০১৫ সালের জুনে আমানতের গড় সুদের হার কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ঋণের সুদের হার কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এতে স্প্রেড সামান্য কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সলের ৩১ মে আমানতের গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে এবং ঋণের সুদের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশে। এতে স্প্রেড সামান্য কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে গত বছরের জুনের তুলনায় আমানতের সুদহার ১ দশমিক ১৩ শতাংশ কমলেও ঋণের সুদ কমেছে ১ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণের সুদ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। 

ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণের সুদহার কমানো উচিৎ। ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে আস্তে আস্তে তা নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ঋণের সুদ অনেক কমেছে। আগামীতে তা সহনীয় পর্যায় নেমে আসবে। 

ব্যাংক সুদের উচ্চ হার এ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তার মতে দেশের বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, সুদের হার কমানোর পাশাপাশি বকেয়া ঋণ পরিশোধেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে হবে। সহজ শর্তে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে হবে।

মাতলুব আহমাদ বলেন, সুদের হার কমাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছি। এরই মধ্যে সুদের হার ১৮ শতাংশ থেকে ১১-১২ শতাংশে নেমে এসেছে। 

Leave a Comment

এই বিভাগের আরও খবর

Copyright 2016 All rights reserved easynews24.com. Published by Azmari Huq on behalf of Unity Media House. Website Developed By Star Design BD