পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে ফিলিপাইন, অর্থমন্ত্রীর না
অনলাইন
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের করা তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে ফিলিপিন্স সরকার। দেশটির অর্থমন্ত্রী কার্লোস ডমিনগেজের এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে রোববার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ফিলিপিন্সকে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, জানি না তারা চেয়েছে কিনা। তবে তারা চাইলেও দেয়া হবে না। এটা দেয়ার না। এটা বাংলাদেশের ইন্টারনাল রিপোর্ট।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এই অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের চারটি হিসাবের মাধ্যমে চলে যায় ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে। এই অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হাতে এসেছে দেড় কোটি ডলার। আরো ২৭ লাখ ডলার জব্দ করা আছে। বাকি অর্থ উদ্ধারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্স সফর শেষে দুদিন আগে ফিরেছেন।
গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অর্থমন্ত্রী ডমিনগেজের দেয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ঢাকার যে প্রতিবেদন, সেটাতে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সে সময় তিনি অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ জানান, তার কাছে এখনো কিছু চাওয়া হয়নি। এর আগে তদন্তের স্বার্থেই প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কথা জানায় বাংলাদেশ। অপরাধীরা সচেতন হয়ে যাবে বলে কারণ দেখানো হয়।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের আরো ২ কোটি ৯০ লাখ (২৯ মিলিয়ন) ডলার ফিলিপিন্সের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে এ অর্থ ফেরত আনা হবে। চুরি যাওয়া বাকি অর্থও ক্রমান্বয়ে ফেরত আনা হবে। মুহিত বলেন, সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
মন্ত্রী আরও বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে জমা রাখা হলেই- তা তাদের সম্পত্তি হয়ে যায় না। অর্থ ফেরত না দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। সেগুলো বাংলাদেশের অর্থ; এ অর্থ আমাদের প্রাপ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমদের নেতৃত্ব যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে- তা দেখতে চেয়েছে ফিলিপাইন সরকার। ওই প্রতিবেদনের অনুলিপি তাদের দেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। আর ফিলিপাইনের কোনো চিঠি পেলেও ওই দেশের সরকারের কাছে এ প্রতিবেদন দেয়া হবে না। কারণ এটি আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদন। এটি অন্যদের দিতে আমরা বাধ্য নই। রিজল ব্যাংক টাকা না দিলে বাংলাদেশের কী করণীয়- এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু করণীয় নাই। একটু পারসু করা, উইথ দি গভর্নমেন্ট অব ফিলিপিন্স। তারা আমাদের সঙ্গেই আছেন।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, যৌথভাবে বাংলাদেশের পক্ষে রিজার্ভ উদ্ধারে ফিলিপাইন্স সরকার দুটি মামলা করেছে। এ মামলাগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। আপাতত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রয়োজন নেই। যদি মামলা করতে হয় ফিলিপাইন সরকার করবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
Leave a Comment