বাংলাদেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
অনলাইন
বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর আগ্রাসী ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। সর্বক্ষেত্রেই এসব সাইটগুলো মস্তিস্কে প্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষ করে কোনো উৎসব বা সংকটাপন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমগুলো জুড়ে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে ফেসবুক। ওয়েবসাইটের র্যাংকিং নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সার তথ্য মতে বাংলাদেশে ব্যবহারের দিক থেকে ফেসবুকের অবস্থান ষষ্ঠ। দ্রুত গতিতে র্যাংকিং কমে যাচ্ছে ফেসবুকের।
বাংলাদেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমলেও উল্টা পথে রাজত্ব করছে ভিডিওভিত্তিক সাইট ইউটিউব। ২০১২ সালে বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়ার সময় ভিডিও কন্টেন্ট সাইটটি চতুর্থ স্থানে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সাইটটি বন্ধ থাকলেও তার অবস্থানে অনড় ছিল। এরপর থেকে ইউটিউব ক্রমশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এখন প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। এই প্রভাব বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অ্যালেক্সার তথ্য অনুযায়ী ভারতে ফেসবুকে রয়েছে পঞ্চম স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। পাকিস্তানে ফেসবুকে রয়েছে চতুর্থ স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। নেপালে ফেসবুকে রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে প্রথম স্থানে। ভুটানে ফেসবুকে রয়েছে ৩৩তম স্থানে আর ইউটিউব রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
আন্তর্জাতিক বাজারেও ফেসবুক অবস্থান খুব বেশি ভাল না। সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক জরিপে বলা হচ্ছে, ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে বড় ধরনের ধস নামবে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা জরিপের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০১৭ সাল নাগাদ ফেসবুকের ব্যবহারকারী সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমবে। গবেষকদের মতে, ‘দ্রুত জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক সংক্রমণ নির্জীব হওয়ার আগে প্রসারিত হবে। এরপরে এক সময়ে এটি জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলবে। যা এপিকমাইডোলজিক্যাল মডেলের মাধ্যমে জরিপে তুলে ধরা হয়েছে।’
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকের দশম জন্মদিন। প্রতিদ্বন্দ্বী একইধরনের অন্যান্য ওয়েবসাইডগুলো যেমন, মাইস্পেস, বেবু, হাইফাইভ ইত্যাদির চেয়ে ফেসবুক বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে। তবে ফেসবুকের প্রধান অর্থায়ন কর্মকর্তা ডেভিড ইবার্সম্যান স্বীকার করেছেন যে, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে নতুন ব্যবহারকারী বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ফেসবুকে আগ্রহ কমেছে। যদিও ফেসবুকের তথ্য মতে, অক্টোবরে তাদের নতুন গ্রাহক সংখ্যা ১২০ কোটিতে পৌঁছায়। ডেস্কটপে ফেসবুকের ব্যবহার কমেছে, বেড়েছে স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে।
এদিকে ব্লুমবার্গের এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি সংস্থার গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মাঝে ফেসবুক ক্রমশ তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। ব্যবহারের হার দিন দিন কমছে বলেও দাবি ওই সংস্থাটির। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এ বছর ৬ শতাংশ তরুণ ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০১৩ সালে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ৯৪ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ শতাংশে। ২০১২ সালে ৯৫ শতাংশ তরুণ ফেসবুক ব্যবহার করতো। এই তিন বছরে মার্কিন তরুণরা বেছে নিচ্ছেন অন্য সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু তরুণরা নয়, ফেসবুক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের মাঝেও৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩৫ বছরের কম বয়সীরা ফেসবুক ছেড়ে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা হ্রাস নিয়ে কোনো গবেষণা না হলেও অ্যালেক্সার তথ্যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে। দেশে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমে যাচ্ছে কেন? উত্তরে ফেসবুক নিয়ে কাজ করা ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল টাইমসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মিনহার মহসিন উদ্দিন প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘বাংলাদেশের ফেসবুকে আজে বাজে ভুয়া নিউজ বেশি হচ্ছে বলে এখান থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোও নানান সময় ভুয়া নিউজ প্রচার করছে ফেসবুক দিয়ে। ফলে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। ফেসবুক আইডি হ্যাক নিয়েও অনেক খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবার মেয়েদের ফেসবুক আইডিতে বাজে প্রস্তাব দেওয়ার খবর আমরা জানি। অনেকেই সাইবার ক্রাইমে হ্যারেজ হচ্ছেন। এসব কারণেই মানুষ আর ফেসবুক ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না।’
বাংলাদেশে ইউটিবের উঠে আসার বিষয়ে মিনহার মহসিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন ব্রডব্যান্ড লাইন নিলে ইউটিউবের জন্য আলাদা ব্যান্ডউইথ দেওয়া হয়। মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দে ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন। বিনোদনের জন্য ইউটিউব এখন অনেক বড় মাধ্যম। ফলে ইউটিউব এখন বাংলাদেশে রাজত্ব করছে।’
এ ব্যাপারে দৈনিক কালের কন্ঠের বিজনেস এডিটর মাসুদ রুমী বলেন, ‘ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে! আর একটু হলে কালের কন্ঠের নিচে নেমে যাবে। আজকের অ্যালেক্সা র্যাংকিং দেখে খুশি হলাম এই ভেবে যে, আমাদের সবকিছুতেই ফেসবুক নির্ভরতা কমছে। এটা শুভ লক্ষণ। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বুস্টিং আর বিজ্ঞাপনের নামে শতশত কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কোটি মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা, তরুণীর চোখের ঘুম, প্রাইভেসি কেড়ে নিচ্ছে এই মাধ্যম। চীনের মতো ফেসবুকমুক্ত বাংলাদেশ চাই। আসুন এবার সবাই ফেসবুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
Leave a Comment