সন্ত্রাসবাদঃ টার্গেট এবং বেনিফিসিয়ারী, একটি ভাবনা।
মেহ্দী হাসান
সন্ত্রাসবাদ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। কিন্তু এ সন্ত্রাসবাদের দায় যাদের উপর বর্তানো হয় অর্থাৎ মুসলমান আশ্চর্যজনকভাবে তারাই এর শিকার সবচেয়ে বেশী। কারন এই সন্ত্রাসবাদের কারনে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, ইরান সহ যেকয়টি দেশ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর সবকটি মুসলমান প্রধান দেশ।
সন্ত্রাসবাদ নামক এই ভয়ংকর খেলার প্রধান খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র, ইস্রাইল, ফ্রান্স, ব্রিটেন সহ আরও কয়েকটি দেশ। এর পেছনে রয়েছে তেল সহ মূল্যবান খনিজ এর ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্রের লাভজনক ব্যাবসা। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রাইলের সকল সমশক্তির বিনাশ। আর সারা বিশ্বে মুসলমান জাতির ক্রমবর্ধমান অবস্থা অমুসলিম কতিপয় দেশের কাছে ঈর্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ সিরিয়ার বীভৎস রূপে আহত সেই শিশুটির ভয়ার্ত মুখটির কথা আমরা মনে করে দেখি, বোমার আঘাতে ছিন্নবিছিন্ন ইরাক, আফগানিস্থান বা পাকিস্থানের শরীর গুলোর কথা মনে করি—কতটা নির্মম। এসব হামলার পেছনে যারা রয়েছে তাঁরা অনেক বড় খেলোয়াড়। অথচ ওদের টিকিটিও ধরা যাবে না।
ইরাক, সিরিয়া বা পাকিস্তানে যে হামলা গুলো হচ্ছে সে হামলা গুলোকে আত্মঘাতী হামলা বলে চালান হচ্ছে কিন্তু ওই হামলাকারীকে কেউ চিহ্নিত করতে পারছেনা। ধারনা করা হয় এগুলো আসলে কোন আত্মঘাতী হামলা নয়, ইস্রাইলের আবিষ্কৃত একধরনের স্মার্ট বোমা যা কোন গাড়িতে চালকের অজান্তে তাঁদের এজেন্ট দ্বারা সেট করে দেয়া হয় এবং কোন জনাকীর্ণ স্থানে আসলে দুরনিয়ন্ত্রক যন্ত্রের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটান হয়। আর ফলশ্রুতিতে মৃত্যু ঘটে শত শত নিরিহ মানুষের।ঘটনার পরপরই ইস্রাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট মুসলমান নামীয় কোন সন্ত্রাসী সগঠন এর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়ে থাকে। যেমনটা তাঁরা করেছিল হলি আরটিসান রেস্টুরেন্ট এ হামলার ক্ষেত্রে। কখনও কোন মুসলিম দেশের কোন ভণ্ড ধর্মীয় নেতা বা ভণ্ড শিক্ষকদেরকে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে তাঁরা তাঁদের মিশন চালিয়ে থাকে। আবার কখনও বিধর্মীদের মুসলমান সাজিয়ে ওদের ঘ্রিন্য চক্রান্ত হাসিল করে। এ হামলাগুলো আসলে বিশ্বে মুসলিম কিলিং মিশনের অংশ। এর পেছনে আছে ইস্রাইলসহ ওই সকল দেশ যারা সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার।
কোন সন্ত্রাসী মুসলমান যদি কোন বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঘটায় তবে তা হবে কোন ইহুদি বা খ্রিস্টান স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন স্থান বা দেশে। কিন্তু হামলাগুলো হচ্ছে কোন মুসলমান অধ্যুষিত দেশ বা স্থানে যা সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ। এই সন্ত্রাসী হামলার পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আমাদের দেশসহ বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর অনেক ধর্মীয় নেতা বা শিক্ষক নামিয় ভণ্ড কপট এই বিনিয়োগের একটা অংশ নিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছে আর প্রায় শূন্য মস্তিষ্কযুক্ত কোন মাদ্রাসা বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সহজ সরল উঠতি বয়সের যুবকদেরকে ব্যাবহার করে তাঁদের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর হত্যা করছে নিরীহ মানুষদেরকে। প্রকৃতপক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদের শিকর অনেক গভীরে প্রথিত। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীরা বিভিন্ন সভা সেমিনারে নীতিকথা বলে বেড়ায় আর ভেতরে ভেতরে ডাকাতি করে ঠিক তেমনি।
আমরা সকল ধরনের সংঘাত এর বিরোধিতা করি। সন্ত্রাসের নামে সারা বিশ্বজুড়ে জঘন্য খেলাকে ধিক্কার জানাই। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের কেউ যেন ব্যাবহার না করতে পারে। আর ইসলাম অবশ্যই ১০০% শান্তির ধর্ম যেখানে স্পষ্ট বলা আছে যে “কেউ যদি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করল সে যেন সমস্ত মানব জাতিকে হত্যা করল”। সবাইকে এটা মনে রাখা উচিৎ যে পৃথিবীতে মানুষ আগে এসেছে, ধর্ম নয়। মানুষের কল্যানের জন্য ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে, ধর্মের কল্যানের জন্য মানুষ নয়। অর্থাৎ মানুষকে বাদ দিলে ধর্মের অর্থ হয় না। যারা ধর্মকে ব্যাবহার করে নিজ হিন স্বার্থ চরিতার্থ করছে তাদেরকে ধিক্কার দিচ্ছি। আর যারা সন্ত্রাসবাদকে লালিত করে ঘৃণ্য ব্যাবসা করছে এবং হত্যা করছে নিরীহ মানুষদেরকে অদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা করছি।
লেখকঃ ব্যাংকার
Leave a Comment