Breaking News

প্রচ্ছদ > অর্থনীতি

দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, যার মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে।

অনলাইন
 দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, যার মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে।

অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ও নিরীক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। যার মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে সিএজির প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শিগগিরই এসব প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যমান বিধিবিধান ভেঙে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় ঘটেছে। সরকারি নিরীক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি-কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই অনিয়মের বিষয়গুলো চিহ্নিত হয়েছে। 

সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান এবং সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা আদেশ ও নির্দেশ অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রমের দুর্বলতাকেও দায়ী করা হয়

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে সোনালী ব্যাংকে। সিএজির নিরীক্ষা বিভাগ ২৪টি রিপোর্টের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের অনিয়ম শনাক্ত করেছে। বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ধরা পড়েছে ১ হাজার ১১ কোটি টাকার। ৩৫টি অনিয়মের মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। ২২টি ঘটনায় বিপুল পরিমাণ এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া ২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকার অনিয়ম মিলেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে।

সূত্র মতে, ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত কয়েকটি মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিভাগের ওপর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন, অর্থ, রেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বস্ত্র ও পাট, কৃষি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, শিল্প, ডাক টেলিযোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পররাষ্ট্র, পনিসম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সোনালী, বেসিক, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকও রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ওপর মোট ৩২টি অডিট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি রিপোর্ট হচ্ছে সরকারের হিসাব সম্পর্কিত ও ৫টি বিশেষ রিপোর্ট। বাকি ২৩টি রিপোর্টে এসব আর্থিক অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়েছে। পরে টাকা ফেরত পায়নি ব্যাংক। এছাড়া ভুয়া রফতানি বিল কেনা, ভুয়া ভেজাল সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ নেয়ার ঘটনা আছে। বন্ধকি সম্পত্তি প্রকৃত মূল্যায়ন না করে ঋণ ইস্যু, জামানতের চেয়ে বেশি ঋণ দেয়া, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করে শাখা থেকে ঋণ মঞ্জুর, খেলাপিকে পুনরায় ঋণ ইস্যুসহ নানা কৌশলে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর দায় বেড়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগে ৩৫৩ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটন করেছে সিএজির নিরীক্ষা বিভাগ। অনিয়মের কৌশল প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজার দর যাচাই না করেই সিডিউলের বাইরের পণ্য কেনা হয়। এছাড়া রেকর্ড গায়েব করে সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ও বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে মালামাল কেনার মাধ্যমেও টাকা আত্মসাৎ করা হয়। একই সময়ে একই অফিসে কাজ করে দুটি পৃথক সরকারি অফিস থেকে বেতন নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণের অভাব ছিল। যে কারণে এসব অনিয়ম করতে পেরেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে রাজস্ব ফাঁকি দিতে কম উৎপাদন দেখানো, অনুমোদনের চেয়ে পণ্যের উপকরণ ব্যবহার বেশি দেখিয়ে রেয়াত সুবিধা নেয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ৪২৮ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত করেছে সিএজি কার্যালয়। এছাড়া বিভিন্ন হিসাবের ওপর এক্সসাইজ শুল্ক কম দেয়া, কম হারে ভ্যাট কাটাসহ নানা কৌশলে এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়।  প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিভিন্ন সময়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন, এসআরও অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে পেট্রোবাংলার অধীন বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে। নিন্মমানের কেসিং পাইপ কেনা, অতিরিক্ত বিল পরিশোধসহ নানা কৌশলে এ অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি ঘটনায় দরপত্র ছাড়া ভূমি ইজারা দেয়া হয় হোটেল নির্মাণের জন্য। এরপর ভূমি ইজারা গ্রহণকারীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়নি। এভাবে নানা কৌশলে বিমানের ২৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সিএজির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২১৪ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে  সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়, সঠিকভাবে ডাম্পিং কাজ শেষ করার আগেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়। এছাড়া অন্য একটি কাজের দরপত্র গ্রহণ ও বিলও পরিশোধ করা হয়েছে সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই। একইভাবে ড্রেজার মেরামতের নামে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে সেখানে বলা হয়। সিএজির রিপোর্ট ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণের দুর্নীতির কারণে সম্প্রতি সিলেট হাওর অঞ্চলে কয়েকটি উপজেলায় অকাল বন্যা হয়।

উল্লেখিত অনিয়ম ছাড়াও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ১৮০ কোটি টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা, এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২৬৯ কোটি টাকা, রেলওয়ে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৪২ কোটি টাকা, পর্যটন ও কৃষি কর্পোরেশনে ৫ কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৬৭ কোটি টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ১৬ কোটি টাকা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসায় প্রায় ৩৩ কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত হয়। এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৯৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে প্রায় ২৪ কোটি টাকার অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে।

Leave a Comment

এই বিভাগের আরও খবর

Copyright 2016 All rights reserved easynews24.com. Published by Azmari Huq on behalf of Unity Media House. Website Developed By Star Design BD